রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন

কোন পথে যাচ্ছে পাকিস্তান

স্বদেশ ডেস্ক:

পাকিস্তানের ৭৫ বছরের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রীই ৫ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করতে পারেননি। ধারণা করা হচ্ছিল- ‘ক্যারিশমেটিক’ রাজনীতিক হিসেবে ইমরান খান পুরনো পথে যাবেন না। কিন্তু বিধি বাম। বহু নাটকীয়তার পর গত শনিবার গভীর রাতে অনাস্থা ভোটে হেরে যান তিনি। নাম লেখালেন ক্ষমতাচ্যুতদের তালিকায়। এমন প্রেক্ষাপটে আজ সোমবার দেশটি পার্লামেন্টে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের লক্ষ্যে অধিবেশন বসবে। গতকাল রবিবার দুজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। তারা হলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) দলের শেহবাজ শরিফ ও ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) শাহ মেহমুদ কুরেশি; যিনি বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। খবর ডন ও বিবিসি।

এবার অনাস্থা ভোটের আগে রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলে আসছিলেন, ইমরানের সামনে অগ্নিপরীক্ষা। জোটে ভাঙনের পর মোটামুটি পরিষ্কার ছিল যে, ক্ষমতা হারাতে যাচ্ছেন তিনি। তবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এমন কোনো কৌশল নেই, যা তিনি বাজিয়ে দেখেননি। বিরোধীদের বলেছিলেন, ‘শেষ বল পর্যন্ত খেলব’। খেলেছেনও বটে, তবে হেরেছেন। গত শনিবার দিনভর নানা নাটকীয়তার পর গভীর রাতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে ১৭৪ জন সদস্য প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দেন। অনাস্থা প্রস্তাব পাস হতে ৩৪২ সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্টে ১৭২ সদস্যের ভোটের প্রয়োজন ছিল। আর এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাচ্যুতি ঘটে। একই সঙ্গে তিনি আরেকটি ‘রেকর্ড’ গড়েন- অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতা খোয়ানো প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানে তিনিই প্রথম।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জি নিউজ জানিয়েছে, আজ সোমবার নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের লক্ষ্যে অধিবেশন বসবে। গতকাল রবিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল। বিকাল ৩টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। খবরে বলা হয়, সোমবার দুপুর ২টায় অধিবেশন শুরু হবে।

শেহবাজ শরিফ দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই। এবার লড়াইয়ে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গতকাল তিনি শহীদ খাকান আব্বাসী, সৈয়দ নাভিদ কামার, খুরশিদ আহমেদ শাহ, মহসিন দাওয়ারসহ অন্যান্য দলীয় নেতৃবৃন্দ সঙ্গে নিয়ে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন জমা দেন। ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় সাংবাদিকদের শেহবাজ বলেন, জাতীয় সম্প্রীতিই হবেতার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। অর্থনীতি চাঙ্গা করে জনগণকে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার আশ^াস দেন তিনি। এমনকী বিরোধী নেতার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন মন্ত্রিসভার প্রতিশ্রæতিও দেন তিনি। তার কথায় একটি নতুন যুগের সূচনা করবেন তিনি।

এখানে বলে রাখা ভালো, একই স্বপ্ন দেখিছিলেন ইমরানও। ২০১৮ সালে ইমরান খান তুমুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন ইমরান। দেশের তরুণ প্রজন্ম ইমরানের পাশে ছিলেন। বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন উদীয়মান শক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান করে নিয়েছিলেন ইমরান খান। তার সমাবেশে লাখো জনতার ঢল ছিল। এত কিছুর পরও কেন মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ইমরানকে বিদায় নিতে হলো। এখানে বিশ্লেষকরা ইঙ্গিত করেছেন পাকিস্তানের ক্ষমতার অভ্যন্তরে ‘ক্রীড়নকের’ দিকে। কেননা স্বাধীনতার পর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কলকাঠি নেড়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইমরানের দল ত্যাগ করা একজন সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, তারাই (সেনাবাহিনী) ইমরান খানকে তৈরি করেছে, তারাই তাকে সরিয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে উভয়পক্ষই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ইমরান খান আঙুল তুলেছেন ‘বিদেশি শক্তির দিকে’।

ক্ষমতা হারানোর পর গতকাল রবিবারই সরব হয়েছেন তিনি। ইমরান বলেন, শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। টুইটে ইমরান বলেন, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হয়। কিন্তু শাসন পরিবর্তনে বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ আবার পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। ‘বিদেশি ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে পিটিআই। এরপরই পিটিআই চেয়ারম্যান কথিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।

সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নতুন সরকারকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষমতার মেয়াদ শেষ করতে না-পারা পিটিআই যদি ক্ষমতায় আসে, তা হলেও তাদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। আর যদি পিএমএল-এন অর্থাৎ শাহবাজ শরিফ যদি নতুন প্রধানমন্ত্রী হন, তা হলে তাকে আরও বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। নতুন সরকারের সামনে যেসব সমস্যা প্রকট হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে দুর্বল অর্থনীতি, জঙ্গিবাদ; সর্বোপরি সরকারে জোটসঙ্গীদের মনরক্ষা করা। ইনিস্টিউট অব হিস্টোরিক্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের অধ্যাপক জাফর আহমেদ বলেন, যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক সম্পর্কের স্তরে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাকিস্তানে রাজনীতিতে চলমান অস্থিরতা শিগগিরই থামবে না। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতেও। ইতোমধ্যে পাকিস্তানি রুপির দাম পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতনের নতুন রেকর্ড হয়েছে। এক ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে ১৮৮ রুপি। পাকিস্তানের ইতিহাসে কখনো রুপির দাম এতটা নামতে দেখা যায়নি। যদিও গত তিন বছর থেকেই পাকিস্তানের অর্থনীতির চাকা মন্থর হয়ে পড়েছে। শিল্পখাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। রিজার্ভ কমে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

ইসলামাবাদের গবেষণা সংস্থা পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স (পিআইডিই) ভাইস চ্যান্সেলর নাদিম উল হক বলেন, ‘আমাদের জন্য কোনো নির্দেশনা নেই। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাপক সংস্কারনীতি প্রয়োজন।’ তার কথায়, একটি ঝুলন্ত তলোয়ার যে কোনো সময় পাকিস্তানের ওপর পড়তে পারে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877